

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত মুক্তি কোন পথে, কতদূর? স্বাধীনতা কি সুরক্ষিত? শিরোনামে এক গোলটেবিল বৈঠক বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: ইলিয়াছ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। সভায় লিখিত বক্তব্য পেশ করেন কল্যাণ পার্টির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ড. বদরুল আলম সিদ্দিকী। তিনি "কল্যাণ রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ: বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির একটি প্রস্তাবিত দৃষ্টিভঙ্গি" বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। " ধর্ম শিক্ষা অবহেলিত রেখে মুক্ত স্বাধীন, সার্বভৌম ও সুরক্ষিত কল্যাণকর জাতি গঠন অসম্ভব " বিষয়ে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন মাওলানা মোঃ এমরানুল হক।
সভায় অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রিয় বি এন পির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. এহসানুল হক মিলন, এন ডি পি চেয়ারম্যান ক্বারী এম এ তাহের, প্রগতিশীল ন্যাপ এর আহ্বায়ক পরশ ভাষানী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও নৈতিক সমাজ এর আহ্বায়ক মেজর জেনারেল (অব:) আমসা আমিন, গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নূর, কর্ণেল অব: জেড আর এম আশরাফ আলদিন, প্রিন্সিপাল সেলিম ভূইয়া, সাবেক ভিসি প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম, জাগপার সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান, আসাদ পারভেজ, লেফটেনেন্ট কমান্ডার ফয়সাল মেহেদী সহ কল্যাণ পার্টির নেতৃবৃন্দ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন (ধারণকৃত) ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে জাতির বিবেকের কাছে নানাবিধ প্রশ্ন উঠছে। শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে যে স্বপ্নকে সামনে রেখে বীর বাঙ্গালি যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তা কি বাস্তবায়িত হয়েছে? বুকের ছাই চাপা আগুনকে উসকে দিয়েছিল যে স্বপ্ন তা কি এই? যা এখন আমরা দেখছি। স্বাধীনতা অর্জিত হলেও সেই স্বাধীনতা কি আসলেই জাতিকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছে? স্বাধীনতা যে সুরক্ষিত সেটাও তো মানুষ বুঝতে পারছেনা। আজীবন লালিত মুক্তির স্বাদ তেতো না কি মিষ্টি সেটাইতো পরখ করা হলোনা। মুক্তির জন্য কোন পথে হাঁটতে হবে, সেটা কি কারো জানা আছে? জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা ও মুক্তির বিজয় নিশান উড়বে কখন? শ্বাপদ, হায়েনা আর শকুনদের লকলকে লোভী দৃষ্টি আমাদেরকে আতঙ্কিত করে। মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাতিকে পথভ্রষ্ট করার সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে সুপ্ত বিবেক জেগে উঠুক। গর্জে উঠুক বাংলার মানুষ,সকল ষড়যন্ত্র কে রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার। খাদের কিনারে দাড়িয়ে আবারো দৃপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করতে হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার কায়েম কর। কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন কর। সুস্থ বিবেকবান সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন আগামীর প্রজন্ম গড়ে শোষণ বঞ্চনার সমাপ্তির রেখা টানতে হবে। পথভ্রষ্ট জাতিকে আলোর দিশা দিতে হবে এবং সেটা এখনই।
ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন
বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষন একক ব্যাক্তির নয়। সেটা অনেকের ইনপুট সমৃদ্ধ ভাষন। বিশেষ ইনপুট হচ্ছে সিরাজুল আলম খান এর। দেশের নব্বই ভাগ লোক ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন, তাদের অনুভূতিকে অবহেলা করে কিছু করা সমীচীন নয়। হিন্দু ধর্ম নিধন আল্লার নির্দেশ নয়। হিন্দু মুসলিমরা পাশাপাশি থাকবে। নামাজ না পড়লে অমুসলিম সেটা বলা অনুচিত। সেটা আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। হযরত আয়েশা রাঃ হচ্ছেন সারা পৃথিবীর "জোয়ান অব আর্ক”। ষাট হাজার উটের বহর নিয়ে যুদ্ধ নেতৃত্ব দিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ধর্ম আমাদের আলোকিত করে,নৈতিকতা শিখাতে হবে। ভালো মুসলিম হতে হলে আল্লাহর বাণীকে হৃদয়ে ধারন করতে হবে। পঞ্চম শ্রেণী থেকে আরবী ভাষা শিক্ষা চালু করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সেজন্য ২ কোটি পরিবারকে রেশনিং এর আওতায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতিকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করবেন না। হকার উচ্ছেদ না করে মানবিক হতে হবে।
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন বলেন সরকার সময়ের অপব্যবহার করে জিয়া ভাসানীর নাম পাল্টে দিয়েছে।মেধার অপব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন গঠনকে কলুষিত করেছে।গঠনমূলক পরিবর্তনে নৈতিকতা লাগে।আজকে কোথাও নৈতিকতা, আদর্শ নেই কিন্তু অবৈধ টাকার অভাব নেই।ঘুম থেকে জাগলেই দ্রব্যমূল্য বাড়ে।শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বসে পড়েছে। বাইশ যাবে তেইশ আসবে সরকার যাদুর বাক্সের কেরামতি তে আবারো ক্ষমতায় থাকবে। সেই যাদুর বাক্সের নাম ই ভি এম। এটা হতে দেয়া যায়না।
গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন এদেশে জ্ঞানী গুনীদের কদর হয়না। কদর হয় চামচাদের। বিগত সময়ে যেই গিয়েছে লঙ্কায় সেই হয়েছে রাবন। মুখে আমরা ধর্মের কথা বলি কিন্তু কাজে সেটা খুজে পাওয়া যায়না। শত শত আলেম ওলামা আজকে জেলে, তাদের মুক্তির ব্যাপারে আমরা নিশ্চুপ। পঞ্চাশ বছরে বিদেশী প্রভুদের সহায়তায় সাম্প্রদায়িক অসাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিপক্ষের শক্তি নামে বিভক্ত করে রেখেছে। সেই বিদেশী শক্তির মদদে এদেশ থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন। শেখ হাসিনার পতনের জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এর জন্য যারাই মাঠে থাকবে আমরা তাদের সাথে থাকব।
সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, জেনারেল ওসমানী সহ ত্রিশলক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানানো হয়। দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ বিপন্ন, গণতন্ত্রহীনতায় দুর্বৃত্বায়ন শিকড় গেড়েছে। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদ আবেদীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন জৈনপুরী পীর সাহেব ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর প্রতিনিধি মাওলানা আরিফুর রহমান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির সহ সভাপতি শহীদুর রহমান তামান্না, মো: আলী হোসেন ফারাজী, মাহমুদ খান, এমদাদুল হক চৌধুরী, মো: শামসুদ্দিন পারভেজ, অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবির ভূইয়া পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আল আমিন ভূইয়া রিপন, নুরুল আফসার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ইব্রাহিম খান সাদাত, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আবু হানিফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী, বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল হক সিরাজী, খাদ্য বিষয়ক সম্পাদক ওবাইদুল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক কল্যাণ পার্টির সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন, যুব কল্যাণ পার্টির সভাপতি মো: জসিমউদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মহিউদ্দিন, মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি তাফহিমুল ইসলাম, মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি আলাউদ্দিন সিদ্দিকী প্রমুখ।