ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্র তৈরি করেছে-বাংলাদেশ

  অনলাইন ডেস্ক :   বুধবার | জুলাই ২, ২০২৫ | ১২:৫৪ পিএম

প্রতি বছর ১ জুলাই পালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, যা শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং আমাদের ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়ের স্মারক। ১৯২১ সালের এই দিনে সূচনা হয়েছিল উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, যাকে আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে ডাকি “প্রাচ্যের অক্সফোর্ড” নামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি আন্দোলনের সূতিকাগার, একটি জাতীয় চেতনার বাহক, একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের কেন্দ্র। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা-সবকিছুর পেছনে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকদের অগ্রণী ভূমিকা।

ইতিহাসের আলোকে এক দীপ্ত প্রতিষ্ঠান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত পূর্ববাংলার শিক্ষাগত পশ্চাৎপদতা দূর করার লক্ষ্যে। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য উচ্চশিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করার ঐতিহাসিক চাহিদা পূরণ করতেই এই উদ্যোগ। সময়ের প্রবাহে, বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়ে ওঠে সর্বস্তরের মানুষের চিন্তা, সংগ্রাম ও স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় ৬০০ একর জমি যাঁরা দান বা বরাদ্দ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিল তৎকালীন ঢাকার নবাব পরিবারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী মুসলিম জমিদার ও ব্রিটিশ সরকার। জমির উৎস দুই ধরণের ছিল; সরকারি জমি (রাজস্ব খাসভূমি)-যা ব্রিটিশ সরকার বরাদ্দ দেয় এবং জমিদার বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের দানকৃত জমি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নবাব খাজা সলিমুল্লাহ ছিলেন অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ও ভূমিদাতা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনার জন্য জমি দান করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাবও দেন, ঢাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের হয়েও তাঁর পরিবার থেকে রামনার জমি ও ভবন (আংশিক) ব্যবহার করতে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তাঁর এই দান ছিল প্রতীকী ও বাস্তব-শুধু জমি নয়, রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ এবং প্রশাসনিক সমর্থন আদায়ে একটি মাধ্যম। পরবর্তীতে নওয়াব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী; তিনি ছিলেন পূর্ববাংলার প্রভাবশালী জমিদার ও শিক্ষানুরাগী মুসলিম নেতা। তিনি ১৯০৬ সালের মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিল ব্রিটিশ লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে উত্থাপন করেন এবং যুক্তি তুলে ধরেন পাশাপাশি জমির বিনিময়ে অর্থ ও আইনি সহায়তা দেন।  স্যার জোহরুল হক ছিলেন শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক; তৎকালীন বাংলা প্রদেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দের অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে পরামর্শ দেন।

১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করে, যার রাজধানী নির্ধারিত হয় ঢাকা। এই প্রদেশের প্রশাসনিক কাঠামো পরিচালনার জন্য তখন ব্রিটিশ সরকার ঢাকা শহরে বিভিন্ন সরকারি ভবন, প্রাসাদ, রেসিডেন্স, অফিস ভবন, ও পরিকল্পিত নগর অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে। তবে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে পূর্ববঙ্গ ও আসাম আবারো পশ্চিমবঙ্গের সাথে একত্রিত হয় এবং রাজধানী ফিরে যায় কলকাতায়। ফলে এই নতুন নির্মিত ভবনগুলোর ব্যবহার অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

লর্ড হার্ডিঞ্জ তৎকালীন ভাইসরয় ১৯১২ সালে ঘোষণা দেন যে পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের জন্য ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা হবে। বঙ্গভঙ্গ রদের পরে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করেন। তখনই ব্রিটিশ সরকারের নিয়োজিত ন্যাথান কমিটি গঠিত হয়। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা তৈরি করেন।সিলেবাস, বিভাগ, নিয়োগ নীতি এবং কাঠামোগত প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেন। রামনাথ সেন, সত্যেন বসু, চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সমর্থন দেন।  যদিও ঢাবি ছিল মুসলিম শিক্ষার বিকাশে উৎসর্গিত, তবুও কিছু হিন্দু বুদ্ধিজীবী শিক্ষা সম্প্রসারণের পক্ষে সমর্থন দেন। তাঁদের স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে একটি উদারমনা বহুসাংস্কৃতিক বিদ্যাপীঠ হিসেবে।  তাছাড়া ঢাকার সাধারণ মুসলিম জনগণ ও শিক্ষানুরাগী সমাজ যারা চাঁদা দিয়েছেন, জমি ছেড়েছেন, কর্মী দিয়েছেন। অনেকেরই নাম ইতিহাসে নেই, কিন্তু তাঁরা এই প্রতিষ্ঠার নীরব সৈনিক।

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম (বাংলাপিডিয়ার প্রধান সম্পাদক) এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন: “Though Dhaka University was a new beginning, it was built on the educational and intellectual foundation already present in institutions like Jagannath College and Dhaka College.”।

নতুন প্রজন্মের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, counterfactual history -র মতো - বঙ্গভঙ্গ রদ না হলে এবং তখনই যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়ে যেত তাহলে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করতে হতো? 

ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে; উত্তর হ্যাঁ, ইতিহাসের প্রকৃতি অনুযায়ী, পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক প্রদেশ গঠিত হতো-এবং তার রাজধানী হতো ঢাকা। সেই প্রদেশের একটি প্রধান সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামোর শুরু হতো একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখন আসা যাক; বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) এর উদ্দেশ্য কী ছিল? মুসলমান-প্রধান পূর্ববঙ্গ ও আসামকে আলাদা করে প্রশাসনিকভাবে সক্ষম ও স্বাধীন ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল উদ্দেশ্য। কলকাতার হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রভাব হ্রাস এবং মুসলমানদের প্রশাসনিক অংশগ্রহণ বাড়ানো ছিল কেন্দ্রীয় নীতি। তাই ঢাকা ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়, আদালত, সচিবালয়, গভর্নর হাউজ-সব কিছু তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার ঠিক এক বছর পর (১৯০৬) নবাব খাজা সলিমুল্লাহ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি তোলেন। সে অনুযায়ী ১৯০৮-১৯১১ সালে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা এগিয়ে যায়। যদি ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ না হলে, ১৯১২-১৩ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়ে যেত। অর্থাৎ, বঙ্গভঙ্গ রদ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আরও আগে হতো। যদি বঙ্গভঙ্গ স্থায়ী হতো, তাহলে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি স্থায়ী পূর্বভারতীয় মুসলিম-প্রধান প্রদেশ তৈরি হতো। ঢাকা হতো রাজধানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতো সেই প্রদেশের উচ্চশিক্ষা ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র। এটি হয়তো আজকের ‘বঙ্গদেশ’ বা ‘বাংলাদেশ’ নামের রাষ্ট্রের একটি ভিন্ন পূর্বসূরি হতো।

ইতিহাসবিদ . রেজাউল করিম সিদ্দিকী তাঁর গবেষণায় বলেন:

“If the Partition of Bengal had not been annulled in 1911, Dhaka University would likely have been established much earlier and would serve as the intellectual backbone of a Muslim-majority province centered in Dhaka.”

বঙ্গভঙ্গ রদ না হলে, পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক প্রদেশ সৃষ্টি হতো এবং সেই প্রদেশের কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও আগে প্রতিষ্ঠিত হতো। শুধু তাই নয়, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির আগে থেকেই হয়তো পূর্ববঙ্গ একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয়ে সামনে আসতো। “যদি বঙ্গভঙ্গ রদ না হতো, বাংলাদেশ হয়তো আরও ৪০ বছর আগেই আত্মপ্রকাশ করত-পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী ঢাকা, আর মস্তিষ্ক হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।” ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ-আসাম প্রদেশ গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর সম্ভাব্য রাজধানী ঢাকা ঘিরে পরিকল্পনা শুরু হয়। তখনই হিন্দু নেতৃত্ব হারানোর আশঙ্কায় রুখে দাঁড়ায়। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পক্ষে থেকেও পরোক্ষভাবে হিন্দু স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়ক হন। হিন্দু নেতারা প্রচার করতে লাগলো বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় হলে কলকাতার নেতৃত্ব হ্রাস পাবে, কলকাতার হিন্দু সম্প্রদায় থেকে অনেক অফিস ঢাকায় চলে যাবে, পূর্ববঙ্গের মুসলিম মধ্যবিত্ত জাগরণে জমিদারদের দখলদারি কমবে, মুসলিম নেতৃত্ব ঢাকায় বেড়ে যাবে, রাজনীতি কলকাতা-নির্ভর থাকবে না।

পরিশেষে ইংরেজ শাসকগণ মুসলিম শিক্ষার ঘাটতি পূরণ এবং পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষায় আগ্রহী করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেও, কলকাতার হিন্দু ভদ্রলোকেরা এটিকে তাদের শিক্ষার আধিপত্যে হুমকি হিসেবে দেখতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ১৯২০-এর দশকে যে বিশাল বইয়ের সংগ্রহ তৈরি হয়, তার একটি বড় অংশ আসে ঢাকার নবাব পরিবার, নওয়াব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং তৎকালীন জমিদারদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে। অনেক আরবি-ফারসি পাণ্ডুলিপি আজও সংরক্ষিত আছে, যেগুলোর ক্যাটালগিং হয়নি।

এটি মূলত ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে পূর্ববাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের ‘ঐতিহ্যবাহী মিলনস্থল’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনায় নেওয়া হয়েছিল। তবে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে পরিকল্পনা বদলে যায় এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হয়। যদিও মুসলিম শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু এর প্রথম ছাত্র ছিলেন এক হিন্দু যুবক – নাম ছিল শচীন মোহন দে (প্রকৃত নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে)। তিনি দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। বহুল আলোচিত ১৯৪৮ বা ১৯৫২ নয়—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে প্রথম রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটে ১৯৩৮ সালে, যেটা কমিউনিস্ট ও মুসলিম লীগপন্থী ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের রেশে ঘটে। এই ঘটনা বহু বছর গোপন ছিল।

পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যচর্চা ছিল নজরদারির অধীন। ১৯২১ সালের প্রথম একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ‘ধর্ম’ বিভাগে “বিবর্তিত ধর্মচিন্তা” বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল, যেখানে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের পাশাপাশি নাস্তিকতা ও ধর্মহীন সমাজ নিয়েও পাঠ্যসূচি ছিল। ১৯২৫ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’ নামে একটি কোর্সে ছাত্রদের প্রকৃত বাগান পরিচর্যা করতে হতো, যার মূল্যায়ন হতো রিপোর্ট, স্কেচ ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে।

বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্বালানী জুগিয়েছে। কিন্তু এমন একটি নজির বিরল, যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – একটি বিদ্যাপীঠ নয়, একে বলা যায় জাতির গর্ভ।বিশ্বে বহু মহান বিশ্ববিদ্যালয় আছে— অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, আল আজহার কিংবা সোরবন। কিন্তু তারা রাষ্ট্র সৃষ্টি করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্রের বীজ বপন করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু স্বপ্ন দেখায়নি, স্বপ্নকে বাস্তব করেছে তার কণ্ঠ দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, নেতৃত্ব দিয়েছে, আত্মত্যাগ দিয়েছে। "অক্সফোর্ড আইন তৈরি করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্র তৈরি করেছে-বাংলাদেশ।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের অধ্যায়ের সৃষ্টি বাংলাদেশ-ভাষা আন্দোলন (১৯৫২): রাজু, সালাম, বরকত, জব্বার-এরা শুধু নাম নয়, এরা এক একটি প্রতীক; এদের রক্তে স্নাত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পথঘাট। স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৯৭১): ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাদের হামলার মূল লক্ষ্যই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-কারণ তারা জানত এখানেই জন্ম নিয়েছে স্বাধীনতার বীজ। গণতান্ত্রিক আন্দোলন: ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী, ২০২৪ এর ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে এই ক্যাম্পাস ছিল অগ্রভাগে।

বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশাল শিক্ষা-ব্যবস্থা, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিজেদের ভবিষ্যত নির্মাণে ব্যস্ত। তবে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো-শিক্ষার মান রক্ষা করা, গবেষণার সুযোগ ও বিনিয়োগ বাড়ানো, শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, মানবতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী গড়ে তোলা। ১ জুলাই দিনটি বাংলাদেশ রাষ্টের জন্য কেবল অতীত স্মরণের দিন নয়, বরং এটি আত্মবিশ্লেষণ ও আবর্তনের দিন। আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত, যেন আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ ও গৌরব রক্ষা করি, যেন আমরা একে আরও বেশি আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা-শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

 

এম এ হামিদ

সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার কর্মী
সাধারণ সম্পাদক, সেন্টার ফর বাংলাদেশ থিয়েটার