শিশুদের হাতেই আগামীর বাংলাদেশ

  আহাদ মোহাম্মাদ তাহমিদ দ্বীপ  সোমবার | জুন ১৪, ২০২১ | ০২:০৭ পিএম

সুন্দর এই পৃথিবীতে শিশুরাও আরেকটি সৌন্দর্য।  একটি বাড়ির খুশির আরেক নাম শিশু। একটি দেশের ভবিষ্যৎ এর আরেক নাম আজকের শিশু। শিশুদের ওই কোমল হৃদয়ে রয়েছে হাজারো সুপ্ত প্রতিভা, দেশ গড়ার ইচ্ছা। কিন্তু সব শিশু ওই প্রতিভার বিকাশ বা বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে না। শিশুশ্রমের বিরোধটা আমাদের বিশেষ দিনের পরেই থেমে যায়। কিন্তু বাস্তবতা চিন্তা করলে আপনার আমার একার পক্ষে বা নির্দিষ্ট কোন একটি সংগঠন, সরকার কারো একার পক্ষে কিছু করাও সম্ভব নয়। আমাদের দেশে এখন প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু কর্মরত রয়েছে,  যাদের মধ্যে ১৭ লাখ শিশুশ্রম এর আওতায় পড়ে। বাকি শিশুদের কাজ অনুমোদনযোগ্য, তারা হালকা এবং অনিয়মিত কাজ করে। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ১২ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী ঝুকিপূর্ণ ও ভারি কাজ করে, আর প্রায় দুই লাখেরও বেশি শিশু যারা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ কাজ করে। তাদের কাজের বৈশিষ্ট্য ও ধরন জীবনের জন্যে হুমকিস্বরুপ। আমরা যদি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, শ্যামপুর এলাকায় যাই এমন অনেক শিশুরই দেখা মিলবে যাদের থাকার কথা স্কুলে কিন্তু তারা পারিবারিক অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক রকম কাজ করছে৷ মিলগুলাতে যে ধরনের কাজ তারা করে তাতে সাস্থ্যঝুকি তো আছেই,  কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ভুলে জীবন ও হারাতে হতে পারে। তবে এই শিশুশ্রম এর উৎপত্তি কোথায়? বাংলাদেশ মধ্যমায়ের দেশ৷ এদেশের অধিকাংশ মানুষের আয় খুবই সীমিত। দেখা যায় যে যেখানে যে বয়সে একটা শিশুকে খেলার ছলে কলম পেন্সিল ধরানো সেখানোর কথা আর সেখানে দুমুঠো খাবার যোগানোর জন্যে দরিদ্র ঘরের শিশুরা কাজের দিকে ঝুকে পড়ে। পড়ালেখা করতে চাইলেও তাদের আর তা করা হয়ে ওঠে না, পরিবারের অর্থের যোগানদাতা হওয়াটাই মুখ্য বিষয়৷ যদি খাবার না থাকে তাহলে তাদের চলবে না, কেও দেখবেও না। এদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করলেও অনেকের তাও হয় না৷ তাদের কাছে শিক্ষাটা শধুই বিলাশিতা মনে হয়, যা তাদের পক্ষে অর্জন সম্ভব না। ভারি কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় অঙ্গহানি, অন্ধত্ত এমন অভিষাপের স্বীকার হতে হয় অনেক শিশুকে৷ যেই শিশুটি হতে পারত দেশের ভবিষ্যৎ, সে তখন হয়ে যায় দেশের জন্যে বোঝা৷ শিশুশ্রম রুখতে হবে, শিশুদের জন্যে সুযোগ বাড়াতে হবে৷ পরিবারের সবার জন্যে কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করতে হবে, যেনো দেশের শিশুরা পড়ালেখার সুযোগ পায়। তাদের সবার জন্যে বিশেষ বৃত্তি, ডে মিল চালু এমন আরো পদক্ষেপ নিতে হবে যেনো দরিদ্র পরিবারের শিশুরা অকালে ঝরে না যায়। আজ যদি আমাদের শিশুরা শিক্ষায় আলোকিত না হয় তাহলে আগামিতে দেশ কে গড়বে, দেশের হাল কে ধরবে! কে হবে আগামির ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা খ্যাতিনামা ব্যক্তি। কে ই বা জীতবে দেশের জন্যে পদক৷ তাই শিশুশ্রম বন্ধ করে দেশের শিশুদের শিক্ষায় আলোকিত করে দেশকে নতুন একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কে এগিয়ে নিতে আমাদের সকলের যার যার যায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাতে হবে। আজকের শিশুই হবে আগামির উন্নত বাংলাদেশের রুপকথার লেখক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা